Skip to main content


পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচী

গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার 2042 সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত আয়ের দেশে পরিণত করতে কাজ করছে। দেশকে উন্নত পর্যায়ে পৌছে নিতে সরকার ঘোষিত প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই পল্লী শিশু ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (পিএসএফ) উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আর্থিক সহযোগীতায় 01 জুলাই 2014 সাল থেকে অদ্যাবধি নওগাঁ জেলার সতীহাট উপজেলার অধীন গণেশপুর ইউনিয়নের 09 টি ওয়ার্ডের 12 টি গ্রামে সমৃদ্ধি কর্মসূচী বাস্তবায়ন কেরে আসছে। ‘উন্নয়নের একটি নতুন পদ্ধতি সমৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও পুষ্টি কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, স্যানিটেশন কার্যক্রম, হাত ধোঁয়া কর্মসূচী, ভিক্ষুক পনর্বাসন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের মাধ্যমে সমৃদ্ধি কেন্দ্র স্থাপন, সমৃদ্ধি বাড়ি নির্মাণ, বিশেষ সঞ্চয় কার্যক্রম, উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা নিরুপণ, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার আয়োজনসহ প্রভৃতি কার্যক্রম করা হয়ে থাকে। সমৃদ্ধি কর্মসূচীর স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের আওতায় 01 টি স্ট্যাটিক ও 01টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এই ক্লিনিক দুটির মাধ্যমে বছরে 04টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়ে তাকে যেখানে প্রতিবছর 3 হাজার লোককে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানসহ বিনামূল্যে ঔষুধ বিতরণ ও বিনামূল্যে চশমা বিতরণ করা হয়ে থাকে।

মূলত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের জীবন বহুমাত্রিক এবং দারিদ্রতায় ঘেরা। কাজেই টেকসই দারিদ্র বিমোচন এবং তৎপরবর্তী আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকল গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ-সম্বলিত কার্যক্রম বা প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা খুবই প্রয়োজন। সেই আঙ্গিকেই দারিদ্রতা দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারসমূহের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে গৃহিত কার্যক্রমের নামই হলো সমৃদ্ধি কর্মসূচী।

পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মানবতাকেন্দ্রিক হয়ে মানুষের সকল কর্মকান্ডের সুপ্রশস্থভাবে বিন্যাস ঘটিয়ে সমভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে দারিদ্র হ্রাস করা এবং পরিপূর্ণরূপে আর্থসামাজিক অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব নয়। এছাড়াও অদ্যাবধি ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে 10 শতাংশের বেশি দারিদ্রসীমার উপরে উঠতে পারেনি। তাই দারিদ্র দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো এবং অর্থকররী কর্মকান্ডসহ দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অনুষঙ্গ নিয়ে পল্লী শিশু ফাউন্ডেশন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পিকেএসএফ এর আর্থিক সহযোগীতায় নওগাঁ অঞ্চলের সতীহাট উপজেলায় গণেশপুর ইউনিয়নে সমৃদ্ধি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।

পিএসএফ-ENRICH (Enhancing Resource and Increasing Capacities of Poor Houholds Towards Elimination of their Poverty) / সমৃদ্ধি কর্মসূচীর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোর বর্তমান সম্পদ ও সক্ষমতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তার মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষমতায়িত করা, যাতে তারা প্রথমে তাদের প্রাপ্ত সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে দারিদ্রের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে টেকসই ভিত্তিতে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে চলতে পারেন এবং প্রত্যেকে মানব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন।

মূলত সমৃদ্ধি কর্মসূচীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে পিএসএফ সহযোগী সংস্থা পিকেএসএফ এর নির্দেশনা মোতাবেক দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে রাষ্টের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক স্তর ‘ইউনিয়ন’ কে লক্ষ্যভূক্ত করে ইউনিয়ন পরিষদ এবং অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময়ের ভিত্তিতে যৌথভাবে সমৃদ্ধি কর্মসূচীর বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও অন্তর্ভূক্ত ইউনিয়নে কর্মরত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কর্মসূচী/প্রকল্প-এর সাথে সম্ভাব্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয়ের মাধ্যমে সকলের সক্ষমতার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা বিদ্যমান। 

পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় চলমান কার্যক্রমসমূহঃ 

পিএসএফ-ঋণ কার্যক্রমের পাশাপাশি নওগাঁ জেলার সতীহাট উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নে বসবাসরত জনগণের টেকসই দারিদ্র দূরীকরণ ও সামগ্রীক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমৃদ্ধিভূক্ত উন্নয়নসমূহে পরিবার ও ইউনিয়নভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরী করে যে সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে তা নিম্নরূপঃ

  1. স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্ঠিবিষয়ক কার্যক্রম;
  2. শিক্ষা কার্যক্রম;
  3. পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনা;
  4. আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম;
  5. বিশেষ সঞ্চয় কার্যক্রম;
  6. আয়-বর্ধনমূলক কার্যক্রম বিষয়ক প্রশিক্ষণ;
  7. যুব উন্নয়ন কার্যক্রম (যুব প্রশিক্ষণ ও কর্ম সংস্থান)
  8. সৌর বিদ্যুৎ কার্যক্রম;
  9. বন্ধুচুলা কার্যক্রম;
  10. শতভাগ স্যানিটেশন ও হাত ধোঁয়া কার্যক্রম;
  11. ঔষধি গাছ ‘বাসক’ চাষাবাদ কার্যক্রম;
  12. বসতবাড়ীতে সব্জি চাষ কার্যক্রম;
  13. কেঁচোসার উৎপাদন ও ব্যবহার কার্যক্রম;
  14. কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ;
  15. ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম;
  16. স্থানীয় জনগোষ্ঠী পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রম;
  17. বসতবাড়ীর জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সমৃদ্ধ বাড়ী তৈরী করা;
  18. অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় কার্যক্রম;
  19. সমৃদ্ধি ওয়ার্ড সমন্বয় কমিটি গঠন ও সমৃদ্ধিকেন্দ্র স্থাপন;
  20. ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম;
  21. বয়স্কদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচী এবং
  22. সামাজিক উন্নয়ন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক কার্যক্রম।

1) স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি কার্যক্রমঃ পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের শতভাগ খানার সকল সদস্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেবা কর্মকান্ডকে 07টি স্তরে বিন্যস্ত করে ইউনিয়নের প্রতি 500টি পরিবার থেকে পরিবারভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা তৈরী ও তথ্য সংগ্রহের জন্য একজন করে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, প্রতি 04জন স্বাস্থ্য পরিদর্শকের এলাকায় খানা পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য একজন করে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়মিতভাবে স্ট্যাটিক ক্লিনিক’র কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে একদিন করে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের ব্যবস্থাপনায় স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে বছরে মোট 04টি করে স্বাস্থ্য ক্যাম্প করা হয়ে থাকে, যেখানে ইউনিয়নের শতভাগ গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের প্রয়োজনীয় ফলোআপ এবং জরুরী ও জটিল রোগীদের জন্য রেফার‌্যাল ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যান্য হাসপাতাল/ক্লিনিকে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এছাড়া এই কার্যক্রমের অধীনে স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ দৈনিক গুচ্ছাকারে 20টি করে বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং নির্ধারিত ছকে পরিবারের সকল সদস্যের স্বাস্থ্যগত অবস্থা, রোগ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। পরিদর্শনকালে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি তারা পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য-বিষয়ক সচেতনতা তৈরি, প্রাথমিক চিকিৎসা, পিরষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের যত্ন, পুষ্টিকর খাবার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা করে থাকেন।

2) শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম ঃ শিক্ষা কার্যক্রমের মূলধারা থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধকরণ এবং গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর অধীনে শিক্ষা সহায়তামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে প্রয়োজনের নিরীখে কমপক্ষে 2টি করে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা কেন্দ্রে শিশু শ্রেণী, প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অনুর্ধ্ব 30 জন ছাত্র/ছাত্রীকে দৈনিক বিকাল 3টা থেকে 5টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা ব্যাপী পাঠদান করা হয়। প্রতিটি শিক্ষা কেন্দ্রের পাঠদান ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তত্ত্বাবধানের জন্য প্রতিটি শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য পৃথক পৃথক অভিভাবক কমিটি রয়েছে। এক্ষেত্রে পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর অধীনে গণেশপুর ইউনিয়নের মোট 12টি গ্রামে মোট 30টি শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে এবং 30টি কেন্দ্রের জন্য 30 শিক্ষিকা ও 2 জন শিক্ষা সুপারভাইসর রয়েছেন বা কাজ করছেন। 01 জুলাই 2014 সাল থেকে ডিসেম্বর-2022 সাল পর্যন্ত পিএসএফ সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় সর্বমোট 6,495 জন শিশুকে পাঠদান করা হয়েছে। 

3) পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনাঃ পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় সতীহাট উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের সমৃদ্ধিভূক্ত পরিবারসমূহে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের পূর্বে একটি নির্ধারিত ছকে পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়, যার প্রেক্ষিতে পরিবারভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে (পরিবার প্রধান, আয়কারী, আয়কারী নন, ছাত্র-ছাত্রী, শিশু বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী প্রভৃতি) নিয়ে প্রয়োজনের নিরীখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবারের সক্ষম ও আয়কারী সদস্যদের বর্তমান সক্ষমতা ও আয়ের বিষয়াদি বিশ্লেষণ করা। পরিবারের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও সম্পদ সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবারগুলি অন্যান্য বিষয়গুলি যেমন- স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বসতবাড়ির উন্নয়ন, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় করণীয়তাই পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল কাজ। যা বাস্তবায়নের জন্য পিএসএফ-ঋণ কার্যক্রমের মাঠ সংগঠকগণ ও সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় একজন সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা কাজ করে থাকেন। মূলত সমৃদ্ধি কর্ম সূচীর এই পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে একটি সমৃদ্ধ বাড়ির সামগ্রীক বিষয় যেমন-বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, বৃক্ষ রোপন, ফুল-ফল ও সব্জি চাষ, হাঁস -মুরগী পালন, গবাদি পশু পালন, মৎস্য চাষ, বাড়ি-ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য কার্ড, বীমা, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার, হাঁত ধোয়ার ব্যবস্থা, পরিবারের সকল সদস্যদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত সকলের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়ে থাকে।

4) আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমঃ পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর এই আর্থিক সহায়তা মূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমৃদ্ধভূক্ত সকল পরিবার সমূহের উন্নয়ন পরিকল্পনা মোতাবেক উপযুক্ত খাতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ প্রদান, অর্থ প্রদান এবং প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়াসে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় তিন ধরণের ঋণ ব্যবহার বা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। যথা (ক) আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম ঋণ, (খ) জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঋণ এবং (গ) সমপ্দ সৃষ্টি ঋণ।

5) বিশেষ সঞ্চয় কার্যক্রমঃ পিএসএফ-সমৃদ্ধিভূক্ত সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়নের অংশগ্রহণকারী সকল পরিবারসমূহের সম্পদ সৃষ্টিতে েএই কার্যক্রমের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। এই কার্যক্রমের আওতায় অতিদরিদ্র পরিবার যাদের মাসিক আয় 3,000/- (তিন হাজার) টাকার নীচে তারা তাদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে মাসে কমপক্ষে 100/- (এক শত) টাকা জমা করবে। এভাবে দুবছর পর্যন্ত সঞ্চয় জমা করার পর নারী প্রধান বা প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছে এমন পরিবারসমূহের ক্ষেত্রে জমাকৃত সঞ্চয়ের সমপরিমাণ অর্থ (সর্বোচ্চ 20,000/-) অনুদান হিসেবে এবং অন্যান্য অতিদরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে উক্ত কর্মসূচীর আওতাধীন সম্পদসৃষ্টির জন্য ঋণ খাত থেকে নমনীয় ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

5) আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণঃ পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় নওগাঁ’র সতীহাট উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের সমৃদ্ধিভূক্ত সকল পরিবারসমূহের সম্পদ সৃষ্টি ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের নিরীখে হাঁস-মুরগী, ছাগল ও গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, মৎস চাষ, ছোট খামার স্থাপন, কৃষিজাত দ্রব্যাদি প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোগ, ব্লক-বুটিক, কারচুপির কাজসহ অন্যান্য হস্তশিল্পে নিয়োজিত সদস্যদেরকে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ও কারিগরি দক্ষতা অর্জন/বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

এছাড়াও যুব উন্নয়ন ও উন্নয়নে যুব সমাজ কার্যক্রম শীর্ষক নারী পুরুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলীর বিকাশ এবং তাদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে কাজ করা হয়ে থাকে।

6) ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রমঃ পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম। পর্যন্ত পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পিকেএসএফ এর নির্দেশনা এবং নির্ধারিত বাজেট অনুযায়ী অদ্যাবধি মোট চারজন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়া এই কর্মসূচীর আওতায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ইউপিভূক্ত দুঃস্থ অসহায় ভিক্ষুকদের তালিকা প্রস্তুতকরণের মাধ্যমে যাচাই বাছাই সাপেক্ষে অপেক্ষাকৃত অসহায় ভিক্ষুক পরিবারগুলিকে  অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বাসন বা সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে সহায়তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত।

উপসংহারঃ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পিকেএসএফ এর আর্থিক সহযোগীতায় পরিচালিত পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীটি মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম, যা সমন্বিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জনগণের টেকসই দারিদ্র বিমোচন এবং টেকসই আর্থ-সামজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উল্লেখ্য উক্ত কর্মসূচীর বাৎসরিক সম্ভাব্য ব্যয় 42,21,680/- (বিয়াল্লিশ লক্ষ একুশ হাজার ছয়শত আশি) টাকা যার 60% টাকা পিকেএসএফ সরবরাহ করে এবং 40% টাকা পিএসএফ তার নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় করে। মূলত নতুন উদ্ভাবনে উৎসাহিতকরণ, উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রসার, মানব ক্ষমতা ও মানবাধিকারের বিকাশ এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট জনগণের মানব-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল ধরণের কার্যক্রম বাস্তবায়নে পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচী কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র বিমোচন এবং জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করাই পিএসএফ-সমৃদ্ধি কর্মসূচীর মূলমন্ত্র।

Subscribe